বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বহুল পরিচিত রোগ হল ডায়াবেটিস। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে বার বার। এই সময়ে বাইরে যেয়ে ব্লাড সুগার পরিমাপ করাটাও নিরাপদ নয়।
কিন্তু বাসায় বসে কিভাবে জানবো রক্তে চিনির পরিমাণ কতটুকু, সেটাই ভাবছেন তো? চিন্তা নেই বাসায় বসে খুব সহজে কিভাবে ব্লাড সুগার পরিমাপ করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই চলুন !
Glucose meter কী?
তৎক্ষণাৎ ব্লাড সুগার পরিমাপ করার জন্য glucose meter ব্যবহার করা হয়। যাদের বাসায় ডায়বেটিস পেশেন্ট আছে, তাদের কাছে এই ইকুইপমেন্টটি খুবই পরিচিত। এ যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজে বাসায় বসেই ব্যথাহীন পদ্ধতিতে রক্তে পরিমাণ চিনির পরিমাপ করা যায়।
Glucose meter কেন প্রয়োজন ?
রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হলে রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ফলে শরীরে রক্ত ঠিক মতো প্রবাহিত হতে না পারে, তখন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এর ফলে মানুষ দৃষ্টি শক্তি হারাতে পারে। ইনফেকশন হতে পারে পায়ে। এছাড়াও অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির পেছনে একটি বড় কারণ ডায়াবেটিস। তাই ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য জরুরি। বার বার হাসপাতালে যাওয়ার চাইতে একটি glucose meter কেনা অনেক বেশি সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী। আকারে ছোট হওয়ায় ব্যাগে ক্যারি করাও যায়। বাইরে বেড়াতে গেলে বা যেখানে আশেপাশে ল্যাবরেটরি নেই, সেখানে glucose meter একমাত্র ভরসা।
Glucose meter এ কী কী থাকে ?
1. মনিটর.
2. গ্লুকোজ সেন্সর.
3. সেন্সর এবং মনিটরের সংযোগকারী কেবল.
4. ডকিং স্টেশন এবং
5. পরীক্ষার প্লাগ।
ব্লাড সুগার কীভাবে মাপবেন ?
1. প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে glucose meter চালু করতে হবে।
2. Glucose meter-এর স্ট্রিপ প্রবেশ করিয়ে নিন।
3. আঙুলের ডগাটি তুলা দিয়ে মুছে নিতে হবে।
4. আঙুলের ডগায় ল্যানসেট বা জীবাণুমুক্ত সূচ দিয়ে ফুটিয়ে নিন ।
5. রক্তের ফোঁটা বের হয়ে আসলে এটি স্ট্রিপের সাদা অংশে স্থাপন করতে হবে।
6. কয়েক সেকেন্ড পর রক্তে চিনির পরিমাণ glucose meter-এ ডিজিটাল স্ক্রিনে ফুটে উঠবে। ব্যস, এভাবে খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন ব্লাড সুগারের মাত্রা।
ব্লাড সুগার কখন মাপবেন ?
বাড়িতে Glucose meter দিয়ে সপ্তাহে বা দিনে কতবার পরীক্ষা করতে হবে, তা নির্ভর করে ডায়াবেটিসের ধরন, কী ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছেন এবং অন্য কোনো অসুস্থতা আছে কি না, তার ওপর। যেমন :
o টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দিনে ৪ থেকে ১০ বার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা প্রয়োজন ।
o টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে (রোগী যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন) তাঁদের সপ্তাহে কমপক্ষে তিন-চার দিন ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা প্রয়োজন ।
o ব্লাড সুগার বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। কোনো দিন সকালের নাশতার আগে ও পরে, এক দিন দুপুরের খাবারের আগে ও পরে, অন্য দিন রাতের খাবারের আগে ও পরে।
o গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে সপ্তাহে অন্তত এক দিন সকালের নাশতার আগে-পরে, দুপুর ও রাতে খাওয়ার পর ব্লাড সুগার মাপতে হবে।
o ডায়াবেটিস খুবই অনিয়ন্ত্রিত থাকলে, অন্য কোনো অসুস্থতা যেমন-জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি থাকলে ঘন ঘন ব্লাড সুগার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
o রক্তে গ্লুকোজ-স্বল্পতার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) কোনো উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা করতে হবে।
Glucosemeter ভুল পাঠ দেয় কেনো ?
1.রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপের আগে হাত না ধুলে মাত্রা ভুল আসতে পারে।
2. খাওয়ার পর এটা মাপার আগে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে তা না হলে ঠিক রেজাল্ট আসে না।
3. অনেকদিনের পুরানো স্ট্রিপ ব্যবহারের কারণে ফলাফল ভুল আসতে পারে।
4. অনেক সময় চেপে রক্ত বের করলে রক্তের চাইতে ইন্টারস্টিশল ফ্লুইড বেশি বেরিয়ে আসতে পারে। তাই এদিকেও খেয়াল রাখবেন।
5. রক্ত নেওয়ার সময় আঙ্গুলের শেষ মাথায় ফোঁটা করতে হবে যাতে ব্যথা না লাগে।
6. Glucosemeter এর মান ভালো না হলে মাত্রা ভুল আসতে পারে।
কিছু ভালো মানের Glucose meter হল –
একটি ভালো glucose meter সন্ধান অনেকেই খোঁজেন। আপনার দরকারি এই পণ্যটি নিচের এই লিঙ্ক থেকে নিতে পারেন-
https://medicalstore.com.bd/
লিখেছেন – ইরোনা মৌমিতা
১২ ফেব্রুয়ারি ,২০২২
তথ্যসূত্র: