স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেশার সঙ্গে অন্যান্য নেশার অনেক মিল আছে। দুই বিষয়কেই আচরণগত আসক্তি বলা হয়। কিন্তু অন্যান্য নেশা ছাড়া যতটা সহজ, অনলাইনের অভ্যেস ছাড়া তার চাইতে অনেক বেশি । তবে
স্মার্টফোনের নেশা রয়েছে কি না বুঝবেন কিভাবে ?
নিচে দেওয়া কয়েকটি লক্ষণ মিলিয়ে নিন। যদি লক্ষণগুলো মিলে যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্মার্টফোন নেশা রয়েছে।
১. বাথরুমেও স্মার্টফোন ব্যবহার করা।
২. নিজের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্যও নিজের সঙ্গে স্মার্টফোন না থাকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়া ।
৩. স্মার্টফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করার কারণে বেশিক্ষণ চার্জ না থাকা ।
৪. অন্যান্য খরচ কমিয়ে স্মার্টফোনের বিল পরিশোধের জন্য অর্থ সঞ্চয় করা ।
৫. স্মার্টফোনে ৩০ বা তারও বেশি অ্যাপ থাকা ।
৬. স্মার্টফোনে অ্যালার্ম বা রিমাইন্ডার উপর নির্ভর করা ।
অত্যধিক গেম আসক্তি, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোযোগ বেশি দিতে গিয়ে মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়ে ব্যাথা দেখা দেয়।
দীর্ঘ সময় চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার , দৃষ্টিহীনতার একধরনের সমস্যা দেখা যায় । মোবাইলের নীলাভ আলো চোখের রেটিনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, উচ্চ আওয়াজে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমে দেখা দিতে পারে শ্রবণশক্তি হ্রাস হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা। কানে হেডফোন লাগিয়ে যত্রতত্র চলাফেরায় প্রতিনিয়ত অনেক দূর্ঘটনা ঘটে।
৪. অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি
দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে টাইপিংয়ের ফলে আঙুলের জয়েন্টে ব্যাথা হয়।এমনকি এর ফলে আর্থরাইটিসের সমস্যা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বসার ভঙ্গি এবং কাঁধ ও কানের মাঝামাঝি ফোন রেখে কথা বলার কারণে বিভিন্ন ধরনের শারিরীক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মনের মধ্যে সব সময় মোবাইল আছে কিনা, নাকি হারিয়ে গেলো এমন একটা ভয় তৈরি হয়। এই রোগের নাম নোমোফোবিয়া তথা নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া। এছাড়াও মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় ।
দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ব্যবহারকারীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। একই সাথে অস্থিরতা ও অমনোযোগীতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত তখন ব্যবহারকারী নিজের অজান্তেই কারো সাথে অশোভন আচরণ করে ফেলেন।
মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের তড়িৎ চিন্তাশক্তি কমে যায়। সৃজনশীল মেধা কমে যাওয়ার ফলে কোন কিছুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়।
স্মার্টফোনে আসক্তি কমাবেন কীভাবে ?
১. প্রয়োজনীয় কথাবার্তার বাইরে স্মার্টফোনে সামাজিক যোগাযোগের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্ধ রাখুন । ধরা যাক, রাতের খাবারের পর ১৫ মিনিট।
২. বাড়িতে কিছু ‘স্ক্রিন-মুক্ত এলাকা’ তৈরি করুন , যেখানে কেউই স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে মেতে থাকতে পারবেন না।
৩. স্মার্টফোনে ব্যয় করার সময়টুকু পরিবারের সঙ্গে কাটান ।
৪. যেসব কাজ শিগগিরই শেষ করতে হবে, তার একটা তালিকা স্মার্টফোনের সঙ্গে রেখে দিন, যাতে ফোন তুলতে গেলেই ওই কাজের তালিকায় চোখ যায়।
৫. অনলাইনে শেয়ার করতে হবে এমন লেখালেখিগুলো অফলাইন থাকা অবস্থাতেই শেষ করে নিন।
৬. অপ্রয়োজনীয় সব নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন।
৭. নির্দিষ্ট কাজের সময়গুলোর জন্য টাইমার সেট করে রেখে বিরক্তিকর অ্যাপসগুলোর অ্যাকসেস ও নোটিফিকেশন অফ করে রাখুন।
৮. ‘মোমেন্ট’-এর মতো কোনো একটা অ্যাপস ডাউনলোড করে নিন, যা আপনাকে দিনে কতবার ফোন তুলে নিচ্ছেন তা মনে করিয়ে দেবে এবং আপনাকে এই কাজে নিরুৎসাহিত করবে।
৯. আপনাকে একঘেয়ে লাগা ও ভালো না লাগার মতো অনুভূতিগুলোর সঙ্গেও কিছুটা সময় মানিয়ে চলতে শিখতে হবে, এসবে অভ্যস্ত হতে হবে।
লিখেছেন - ইরোনা মৌমিতা
১ মার্চ ,২০২২
তথ্যসূত্র: