তাই রমজানে জেনে বুঝে তবেই খাবার গ্রহণ করুন। এর উপরই আপনার সুস্থতা নির্ভর করবে। জেনে নিন রমজানে সুস্থ থাকার কিছু মূলমন্ত্র-
১. ইফতারের ঘণ্টা দু-এক আগে নিজের শরীর চাঙ্গা রাখতে কম শারীরিক পরিশ্রম লাগে, কিন্তু উপকারী- এমন অ্যাকটিভিটিস বেছে নিন। যেমন, আধা ঘণ্টা করে নিয়মিত সময়ে হাঁটাহাঁটি করা।
২. আপনি শারীরিকভাবে পারফেক্ট থাকলেও মনে রাখবেন, রমজানের রোজা আপনার দেহকে কিছুটা দুর্বল করে দিতে পারে। আর তাই, রমজানে সুস্থতা বজায় রাখতে পুষ্টিকর খাবারের মেন্যু তৈরি করবেন।
৩. সারাদিন রোজা রেখে অনেকে ওজন কমে যাবে মনে করে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে থাকেন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৪. রামাদানের দাবদাহের দিনগুলোতে দুপুরে যতটা সম্ভব বাইরে না থাকার চেষ্টা করবেন। বৃষ্টি হলে অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হবেন। ভিজে সর্দি-কাশি হলে তা রোজা রাখার অন্তরায় হতে পারে।
৫. রমজানে সুস্থতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ টিপস যেটি তা হলো- ইফতার ধীরে ধীরে সময় নিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে।
৬.ভাজা খাবার, নোনতা খাবার এবং উচ্চ-চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
৭. চা-কফি পান না করাই মঙ্গল। এতে করে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। চা-কফির স্থলে বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা পানীয় পান করুন।
৮. স্বাস্থ্যসম্পন্ন ফল দিয়ে সাজাতে পারেন ডেজার্টের মেন্যু।
৯. পানির কোন বিকল্প নেই। ঘুমানোর আগে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করবেন, যেন পানিস্বল্পতা দেখা না দেয়।
১০.রোজায় প্রতিদিনের খাবারে অল্প পরিমাণ খেজুর, বাদাম ও শুকনো ফল রাখতে যা সারাদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদানের পাশাপাশি শরীরকে সতেজ ও জীবনীশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
১১.রোজার সময় যারা রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার জন্য মাথা ব্যথা করে বা মাথা ঘোরায় তারা ইফতারের শুরুতেই ২-৩টি খেজুর খেয়ে নিতে পারেন, ফলে তারা কিছুটা সুস্থ বোধ করবেন।
১২.সেহেরী এড়িয়ে যাবেন না তা না হলে ডিহাইড্রেট এবং ক্লান্ত বোধ করবেন।
১৩. যে খাবারগুলো সহজে হজম হয়। এসব খাবারকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব খাবার হজমে সমস্যা করে সেগুলো না খাওয়াই ভালো।
রমজানে কী খাবেন ?
১. সেহেরী:
সেহেরী দিয়ে রোজার শুরু হয়। তাই সেহেরীর খাবার যথেষ্ট পুষ্টিমান সমৃদ্ধ হতে হবে। সেহরির আদর্শ কিছু খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত মাংস, মাছ, ভাত বা রুটি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি। সেহরির সময় কয়েকটি খেজুর খেতে পারলে ভালো ।
২. ইফতারী:
ইফতার শুরু করতে পারেন পানি, শরবত, স্যুপ, খেজুর, সালাদ এবং বিভিন্ন রকম ফলমূল দিয়ে। এরপরে আপনি আপনার পছন্দের ইফতারী আইটেম পরিমাণমত গ্রহণ করুন। স্যুপ আপনার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে যা আপনার শরীরের ভিটামিন, মিনারেল ও পানির চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া ভাজি ছোলার পরিবর্তে সেদ্ধ ছোলা, টমেটো, ধনেপাতা ও সরিষার তেল একসাথে মাখিয়ে খাওয়া যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর, খেতেও খুব একটা মন্দ লাগবে না।
রাতের খাবারঃ
রোজার মাসে রাতের খাবারটাও সেহেরির মতো কিছুটা হালকা থাকতে হবে। ভাত ১ কাপ বা রুটি ২টি, মাছ বা মুরগি ১ টুকরো, সবজি ১ কাপ ও সালাদ ১ বাটি। যদি কেউ একটু বেশি ইফতার করে ফেলেন সে ক্ষেত্রে রাতে ভাত বা ভারী কিছু না খেয়ে হাল্কা কিছু খেতে পারেন। সেটা কিছু ফল ও দুধ বা দই হতে পারে।
কিছু সর্তকতা :
রমজানে সুস্থতা বজায় রাখতে ভারী ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। যদি ব্যায়ামরত অবস্থায় মাথা ব্যথা করে, অথবা দুর্বল অনুভব করতে থাকেন, তবে সাথে সাথে ব্যায়াম থেকে সেদিনের জন্য বিরতি নিন।রোজা রেখেও ঔষধ সেবন করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইফতার থেকে সেহরির সময়ে ঔষধ সেবন করা যায়। তাই এ বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে ।
পবিত্র রমজান মাসে সুস্থতা বজায় না রাখলে রোজা অনেকেই রোজা রাখতে পারেন না। তাই, সুস্থ থাকতে এই টিপসগুলো মেনে চলুন এবং থাকুন ফিট রমজানেও!
লিখেছেন – ইরোনা মৌমিতা
১ এপ্রিল ,২০২২
তথ্যসূ্ত্র: